“সমগ্র বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েকটি বছর খুব সংঘাতপূর্ণ ছিল। প্রায় প্রত্যেক স্হানেই আমরা বহু বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি৷ আজকের সমাজে একটি বিক্ষোভ প্রকাশ করা খুব সহজ। মানুষের হতাশা আর মানসিক চাপের মাত্রা প্রবল। যে কোনো সামান্য কারণই মানুষের আবেগকে উদ্বেলিত করে তুলে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য পথে বার করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে মানুষের অন্তরে শান্তি স্থাপন করা, মানুষের মনকে শান্তিপূর্ণ, অহিংস, আর আনন্দিত করে তুলে তাদের সংঘবদ্ধ করে গঠনমূলক কাজে অংশীদার করানোর কাজটা খুবই কঠিন আর দক্ষতাসাপেক্ষ। আর্ট অফ লিভিং বিনীতভাবে সারা বিশ্বজুড়ে এক উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই লক্ষ্যে পরিবর্তন ঘটানোতে উৎসাহী হয়েছেন। আজ আমি খুব খুশী যে মানুষেরা ধ্যানের অভ্যাসকে সাগ্রহে গ্রহণ করেছেন, সেই সঙ্গে রাষ্ট্র গঠনের জন্যে মানুষের অন্তরের গভীরে যে শান্তির প্রয়োজন সে কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন।”
– শ্রী শ্রী রবিশংকর
ভূমিকা
১৯৮১ সালে দি আর্ট অফ লিভিং -এর জন্মলগ্ন থেকেই এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর সারাবিশ্বে শান্তিস্হাপনের ব্রত নিয়েছেন। দি আর্ট অফ লিভিং ফাউন্ডেশন মানুষের ভেতর আধ্যাত্মিকতার সাহায্যে এমন এক দায়িত্ববোধ ও শক্তির সঞ্চার করে যা সমাজ সেবার জন্যে একান্ত জরুরী। সমগ্র বিশ্বে এই মূহূর্তে শান্তিস্হাপনের গুরুত্ব যে কতটা তার উপলব্ধি থেকে উৎসারিত আবেগ ও প্রেরণায় সারা বিশ্বব্যাপী কাজ শুরু হয়েছে। এই কর্মযজ্ঞের পশ্চাতে আছে শ্রীশ্রীর দূরদৃষ্টি; শ্রীশ্রীর স্বপ্ন – এমন এক পৃথিবী, যে পৃথিবীতে হিংসার কোনো স্থান নেই, যেখানে বসবাসকারী মানুষ মানসিক চাপ থেকে, দুশ্চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত৷ এই লক্ষ্য পূরণের জন্য তাঁরই প্রেরণায় ও প্রচেষ্টায় সারা বিশ্বে শান্তি স্থাপনের জন্য জরুরী ভিত্তিতে কর্মদ্যোগ চলছে৷
যুদ্ধবিগ্রহ বা অন্য যে কোনো দুর্যোগ ভুক্তভোগী মানুষকে ভয়, দুশ্চিন্তা আর অবিশ্বাসের কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত করে৷ ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার সেই সব মানুষের মনে তীব্র ঘৃণা আর প্রতিশোধস্পৃহা বাসা বাঁধে৷ শান্তির অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে এসব মানুষের মনকে সুস্থ করে তোলা দরকার। দি আর্ট অফ লিভিং ফাউন্ডেশন এক বিশেষ ধরনের কর্মসূচীর মাধ্যমে এইসব মানুষের মন থেকে মানসিক চাপ দূর করে আর তারা জীবনকে অন্যভাবে দেখবার এক বিশুদ্ধ নতুন দৃষ্টি লাভ করে। আক্রমণকারী ও আক্রান্ত উভয়কেই এক্ষেত্রে সমান সমবেদনার সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। শান্তি স্থাপনের প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হল বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষকে একসাথে নিয়ে আসা ও তাদের ভেতরে সমন্বয়পূর্ণ সহাবস্থানের মানসিকতা তৈরী করে দেওয়া।
শ্রী শ্রী - শান্তির দূত
বহু দেশের অচলাবস্হায় শ্রীশ্রী শান্তিপূর্ণ মধ্যস্হতা স্হাপনের ভূমিকা নিয়েছেন। দুটি বিরোধী সংস্হাকে আপোষ মীমাংসার আলোচনায় রাজী করিয়ে তিনি হিংস্র পরিস্হিতিকে শান্ত করে তোলার ভূমিকা নিয়েছেন। পারস্পরিক বিশ্বাস দৃঢ় করবার ও ঐক্য স্থাপনের লক্ষ্যে দি আর্ট অফ লিভিং ফাউন্ডেশন বিভিন্ন মতবাদে ও সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী মানুষদেরও ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছে। Read more
মানসিক আঘাত থেকে মুক্তি
শ্রী শ্রী বলেন “মানসিক চাপ আর দুশ্চিন্তাই হিংস্রতার মূল কারণ”। ভেতর থেকে মানসিক চাপ দূর হলে, মনে শান্তির উদয় হয় আর সহযোগিতা, দায়িত্ববোধ, বন্বুত্বপূর্ণ মনোভাব আর আপন করে নেবার মানসিকতা আপনা থেকেই বৃদ্ধি পায়।
যুদ্ধ আর আকস্মিক দুর্বিপাকের সময় এই বোধই আমাদের ট্রমা রিলিফ ওয়ার্কশপ গুলোকে উৎসাহ যোগায়। যুদ্ধের বিভীষিকায় আক্রান্ত মানুষেরা এখানে এসে ভয়, দুশ্চিন্তা, ছলনা প্রভৃতি থেকে মুক্ত হবার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এক ধরনের আন্তরিক শান্তি তারা অনুভব করেন। সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের প্রতি ঘৃণা আর প্রতিহিংসার মনোভাবও দূর হয়ে যায়। হিংসার প্রবক্তাদের জন্যেও বিশেষ ধরনের কার্যক্রম রয়েছে যাতে করে তারা সমাজকে এক বৃহত্তর ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এই কার্যক্রম বহু সন্ত্রাসবাদী আর উগ্রপন্থীদের জীবনকে রূপান্তরিত করে তাদের সেই পথ পরিত্যাগ করিয়েছে। Read more
চিরস্থায়ী শান্তি
দি আর্ট অফ লিভিং ফাউন্ডেশন সারা বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে আত্মীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলে৷ এই আত্মীয়তার ভাব বিভিন্ন পরিবেশ থেকে আগত মানুষকে একমন্ত্রে গেঁথেছে, কুসংস্কার দূর করেছে আর বিভিন্ন রাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধ গড়ে তুলেছে।
নিউইয়র্কে সন্ত্রাসবাদী হামলা (সেপ্টেম্বর ২০০১)
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আলকায়দার সঙ্গে যুক্ত ১৯ জন ইসলামিক উগ্রপন্থী পরপর আত্মঘাতী আক্রমণ চালায়। সেই দুর্ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আর্ট অফ লিভিং আর এর সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান ভ্যালুজ (IAHV) সার্বজনীন ট্রমা ত্রাণ শিবির গড়ে তোলে যাতে ১০০০-এর বেশী আক্রান্ত ব্যক্তি, সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীরা উপকৃত হয়েছিলেন।